জুলাই মাসের একটা রাত, সময় ৯টা
৯।৩০টা হবে, মনে নেই এখন। অফিস থেকে ফিরছি। সারাদিন মুসল ধারায় বৃষ্টি হয়েছে, চারধার জলে থই থই। ট্রেন থেকে নেমে ষ্টেশনে দাড়িয়ে আছি,
একটাও রিক্সাও নেই। প্যান্ট গুটিয়ে, হাঁটুর উপর করে, ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটা শুরু
করলাম। সব দোকান বন্ধ, রাস্তা ফাঁকা, একটাও লোক নেই, শুধু আমি আর দু একটা কুকুর।
মনে একটা কেমন ভয় লাগতে শুরু করল। হটাৎ মনে হল, কেউ আমার পিছনে আসছে। পিছনে ঘুরে
তাকালাম, দেখি আমার বয়সের একটা মেয়ে, বৃষ্টিতে সব ভেজা, আমাকে
ডাকছে। দাড়িয়ে গেলাম। বুঝলাম, ও একা, ছাতা নেই সাথে। আমি ছাতার নীচে নিয়ে নিলাম।
দুজনের মুখে কথা নেই, এইভাবে হাঁটছি, কিছুদুর যাবার পর, ও
আমার নাম ধরে ডাকল, “কেমন আছো, অসিমদা?” আমি অবাক হয়ে গেলাম।
তাকিয়ে দেখি, আমার পাড়ার মিমি।
“আমি ভাল আছি, কিন্তু এত রাতে কোথা থেকে
ফিরছিস?”
ও কেমন লজ্জা পেল মনে হল। আবার জানতে চাইলাম।
“আমি গেছিলাম, পয়সা রোজগার করতে”
“ঠিক মানে বুঝলাম না”
“ঘরে
ছোট বাচ্চা, বর কবেই অন্য মহিলাকে নিয়ে চলে গেছে। কি করব? পেট কি কথা শুনবে? মায়ের
কাছে মেয়েকে রেখে বেরিয়েছিলাম”
ওর কথা শুনে আকাশ থেকে পরলাম,
হাত পা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মনে পরল, খুব ছোটবেলায়, এক সাথে আমরা খেলতাম। কত
স্বপ্ন ছিল দুজনের দু’চোখে। তারপর সব হারিয়ে
গেল। আজ আবার কত বছর পরে দেখলাম ওকে। মনে পড়ল, সেই প্রথম চুমু খাবার কথা, আরো কত
না ভোলা কথা।
মিমি হঠাৎ বলল “যাবে
আমার বাড়ীতে?”
না বলতে পারলাম না। গেলাম,
গিয়ে দেখি ওর মা, বয়সের ভারে নূয়ে গেছে, বাচ্চা মেয়েটা পড়ছে, জানে না, মা কিভাবে
পয়সা আনছে। কেমন একটা লাগল, মা জানে না, মেয়ে কি ভাবে পয়সা আনছে, জানার দরকার নেই
ওনার। সময় কেমন নিজের খেয়ালে চলে। এই বাড়ীতেই একদিন সব ছিল। আজ সব হারিয়ে গেছে। আজ
এই বাড়ির মেয়ে নিজের সব বিক্রি করে দিয়েছে, শরীর দিয়ে পয়সা আনছে। সংসার চলছে,
তিনটে প্রাণী খেয়ে বেচে আছে।
[লেখাটা আমার নিজের কল্পনা।
হটাৎ মনে হল, লিখে ফেললাম। কারো সাথে মিলে গেলে মাফ করে দিও। নাম যদি মিলে যায়,
সেটাও মাফ করে দিও]